Saturday, July 30, 2016

বনানী ভট্টাচার্য

চাঁদ থমকে যায়

গত রাতে থমকে যাওয়া আধখানা চাঁদ
নিয়নের আলোতে দেখেছিল
মায়াবী শহরের চুঁয়ে পড়া স্বেদবিন্দু
লাল পানীয় ভরা গেলাসের গায়ে তখন বৃষ্টির আয়োজন
নিভু নিভু আঁচে জ্বলছিল কিছু বেদুইন মন
ঝাপসা দৃষ্টিতে জানালায়
অশীতিপরের অপেক্ষার প্রহর
জেব্রাক্রসিংয়ে সবুজ সঙ্কেত

তখনও জ্বলছিল কিছু ক্ষয়ে যাওয়া মোমবাতি
ছেলেটির মৃত্যুর প্রতিবাদে
অনেক অচেনার মাঝেও বড়ো চেনা এ শহর
তবু কোনও রাতে চাঁদ থমকে যায়
প্রতিবাদী শহর আরও সাহসী হতে চায়
কতটা সম্ভব মোমবাতির শিখায় !!!!


স্বাতী বিশ্বাস

ঈর্ষা

আর কতকাল ঠকাবো নিজেকে
মুখে বলি সবার ভালো হোক
ঈর্ষা হয়না বুঝি অন্যের ভালোতে?
প্রশ্ন করি নিজেকে -
ডুব দিই মন-অতলান্তে মুক্ত খুঁজতে
অবাক হয়ে দেখি আমার ঈর্ষা সর্বত্র!
কেন এমন হয়? আমরা সবাই তাই ই?
নইলে সবার সম্মিলিত ভালোর স্পর্শে
আমিও খুঁজে পেতাম সেই পরশ পাথর!
পৃথিবী শান্তি পেত যুদ্ধ থেমে যেত
আবহমান কাল বয়ে চলত প্রেমের ফল্গুধারা
বলতে হতো না - তোমার ভালো হোক আমার চে' কম!
আসলে সভ্যতা ক্রমশ ডুবছে লোহিতস্রোতে
রক্তগঙ্গাকে আহ্বান করেছি আমরাই
ক্রমবর্ধমান লোভ আর সহনশীলতার অভাবে।
ঈর্ষার যে বীজ রোপিত হয়েছিল ক্ষুদ্র স্বার্থে
আজ তা পরিপূর্ণ মহীরুহ পরিণত হয়ে গগনচুম্বী
আকাশ তাই কুজ্ঝটিকার গ্রাসে, আলো পৌঁছায় না।
আপ্রাণ চাই ঈর্ষার চক্রব্বুহ্য থেকে বেরুতে
সাপ লুডোর মত শুধুই পিছলে যাওয়া
আলোর রোশনাই অধরা থেকে যায় তোমার আমার।
সভ্যতা বাঁধা পরে ঈর্ষা মহাজনের কাছে
আমরা বিচ্ছিন্ন হতে থাকি ক্রমশ

মহাদেশ, দেশ, পরিবার থেকে বান্ধবহীন!

মমতা দাস (ভট্টাচার্য)

ভ্রান্ত ভুবন 
      
এখন দ্যাখে না কেউ
কোন ঝিলে শাপলার ফোটে
এখন বোঝে না কোন মন
কখন শান্ত হওয়া বয়
এখন কোলাহল শুধু
ঘর ভরে প্লাস্টিক ফুল
অথবা নীল ছবি আঁকা
উদভ্রান্ত মস্তিষ্ক-অন্তরে
ত্রস্ত জীবন ভেসে যায় !

জারুলের ফুলগুলো বনে সারাদিন ঝরে টুপটাপ
নদীও স্রোতস্বীনি নয় আজকাল বয় নিরুত্তাপ ।

গ্রাম ফেরে শহরকে খুঁজে
শহর ঘিরেছে গ্রামগুলো
মেঠোপথ হারিয়েছে পথ ,
পায়ে পায়ে ওড়েনাতো ধূলো
নৈঃশব্দ ভয় ডেকে আনে
কখন কি যে ঘটে যায়
মানুষ মুক্ত নয় আজ
আবদ্ধ লোভের খাঁচায় !

বাসনার সীমাহীন জাল,বন্দী বিধাতা মনগুলো
এখানে লোভের রাজ্যপাট
প্রাণহীন 'মমির' জীবন

ভালোবাসা সমূলে লোপাট !

রফসান জানি

অবক্ষয়

উল্লেখযোগ্য চরিত্রের অপমৃত্যু;
পর্দাটা ঝুপ করে নামে,
ভূখণ্ড জুড়ে দল বেঁধে পায়রার দুরন্ত উড়ন বিন্যাস,
মাথার ওপর তাকালে আর ঝাঁক নেই কোথাও
স্থির ডানার বাঁক উধাও
রোদ মাধ্যাকর্ষণে খাড়া।
দু'হাজার পেরিয়ে ষোলো....

মৌন মিছিল, হাতের মুঠোয়
দাবী-দাওয়া,
'হাসি ফিরিয়ে দাও'
একঘেয়ে গাম্ভীর্যের প্রতিবাদ
ছেঁড়া স্যান্ডেলে ফোস্কা পা
মলিন পোষাকী ফুটপাত আশ্রয় করে।

শিকে চড়ে মানবিকতা,
ভারী হাওয়ায় ভাসমান গান পাউডার,
শুঁকতে চেয়েছিল শুদ্ধতাময় বেলী।
AK সিরিজ গর্জন,
ছ্যাঁত করা বুক, আমার নয়তো ?

দ্রোহপর্বত ভেদ করে মৌন মিছিল...

আফরোজা অদিতি

মুক্তিফল নিয়ে

 সেই দিন-
পার হয়ে কারফিউ, নিষ্প্রদীপ মহড়ার অলিগলি
রাঙিয়ে সবুজ ঘাস, দূর করে ঘাসফুলের বুকে
হায়েনার হাসি, তাড়িয়ে শকুন ফিরেছিল
সাহসী পাখিরা মুক্তিফল নিয়ে

উল্লাসে উৎফুল্লতায়
রোপন করেছিল নীল আকাশের ছায়ায়
উর্বরা জমিনে

আজ পাখিদের বসবার শাখা নেই



আয়েত হোসেন উজ্জ্বল

পাখি আসবে

আমি শুধু দাঁড়িয়েই থাকি
অপেক্ষার অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে
বয়ে যায় সময়ের কাঁটা,
তবু আমি দাঁড়িয়েই থাকি।
শাহ্‌বাগ কিংবা চাঁনখার পুল মোড়ে,
টি,এস,সি অথবা বাংলা একাডেমির গেটে,
দোয়েল কিংবা শাপলা চত্বরে
দাঁড়িয়েই থাকি, দাঁড়িয়েই থাকি।
জানি-
পাখি আসবে, পাখি আসবে, পাখি আসবে।

পাখির প্রতিক্ষায় দাঁড়িয়েই থাকি
নবাবপুর, বাংলাবাজার, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু
রসুলপুর বেড়িবাঁধ কিংবা ফরাসগঞ্জের লাল কুঠিতে।
পাখি আসবে-পাখি আসবে বহু দূর দেশ থেকে
পাখি আসবেই জানি।
তাই অন্তহীন প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়েই থাকি
জিঞ্জিরা ফেরী ঘাটে, চকবাজার কিংবা
সোয়ারী ঘাটের শত কোলাহলে,
অমৃতপুর সানরাইজ কিন্ডারগার্ডেন এর সামনে,
যোগেশ দাদার কণিকা জুয়েলার্সে এবং
এমনকি কালিগঞ্জ ব্রাক ব্যাংকের সিঁড়িতে।
পাখি আসবে বলে আমার পথ চাওয়া
বসবার ঘরে, রান্নাঘরে অথবা বেলকনিতে
অথবা বাড়ির খোলা ছাদে।

পাখি আসবে বলে-
দাঁড়িয়েই থাকি এখানে-সেখানে সবখানে।
অবশেষে পাখি আসে
অনেক দূরের পথ পেরিয়ে
পাখি আসে! পাখি আসে! পাখি আসে!
পাখি না কবিতা-

কবিতা নাকি দুঃখ?

শান্তিময় কর

মা ফলেসু কদাচন

একজন সে আপন মনে
কাটছিল কাঠ গভীর বনে
মাথার উপর স্নিগ্ধ শীতল ছায়া --
সারা দুপুর কাঠ কেটে যায়
মিষ্টি মধুর গান সে যে গায়
ভাবে ঠাকুর করবে কবে দয়া ।


কষ্ট কত করছে যে সে
ঠাকুর কেন দেখছে না যে
তার ঠিকানা পায় না খুঁজে হায়,
সারা জনম কষ্ট করেই
যাচ্ছে কেটে এমনি ভাবেই
জীবন বুঝি এমনি করেই যায় ।


মুখ তুলে কি চাইবে না সে
উপর তলায় আছে বসে,
নীচে কত কষ্ট করে লোকটা -
পেলে তারে হাতের কাছে
জানবে কী তার জবাব আছে
প্রশ্ন যে তার আছে শুধু একটা ।


ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে
সওয়াল জবাব সরিয়ে রেখে
মুচকি হাসি হাসেন ভগবান,
কাজ করে যাও, প্রশ্ন কেন,
মা ফলেসু কদাচন

সুখ, দুঃখ সবই তারই দান ।

শিবশঙ্কর গুপ্ত

ফিরিয়ে দিও না

মাঝেমাঝে মিলে যায় 
অনুকূল বাতাস হঠাত্
 
মেঘ কেটে গেলে
 
গতকালের ধূসরতা কাটিয়ে
 
আকাশ ফিরে পায়
 
তার পূরনো নীলিমা আবার,
 
মনে হয় --
পৃথিবীর সব পথ চিনি আমি
 
বহুকাল ধরে;
দূর্ভেদ্য রাতের একাকীত্বেও
 
মনে হয় ----
ধরণীর সবাইকে নিয়েই
 
এখনও জেগে আছি
 
বেঁচে আছি এ প্রতিকূল সময়েও
 
পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীদের নিয়ে ।
ঘাসগুল্মময় পথের ভিতর 
ফিরে পেয়ে যাব ফেলে আসা
 
পদচিহ্ন আবার
  
আবার হেঁটে যাব পরিচিত পথ বেয়ে
 
পথপ্রান্তে তোমার বাড়ানো
 
হাতের ছোঁয়ার আশায় ।
ফিরিয়ে দিও না আর
 
ফিরিয়ো না আমাকে আবার ।


তন্ময় চক্রবর্তী

যাপন

ঘুম ছুঁয়ে ইচ্ছেমত জড়িয়ে ধরা
তোমার স্বভাব জানি
বালিকা
এভাবে যে স্তর আসে
তার আগে কোন বাঁক নেই
বাক নেই
এগিয়ে যাওয়া ছাড়া


সুদীপ দাস

অন্ধত্ব অথবা উজ্জলতা

আমায় অন্ধ করে দাও
যেন এই হত্যা,এই হিংসা
আমাকে দেখতে না হয়।
আমাকে অন্ধ করে দাও
যেন আমাকে দেখতে না হয়
বিবস্ত্র নারীর সকরুণ আঁখি।
আমাকে বধির করে দাও
যেন আমাকে শুনতে না হয়
ওরা হিন্দু,ওরা মুসলিম;ওরা বিধর্মী।
নষ্ট করে দাও
আমার ঘ্রাণশক্তি
যেন মানুষের রক্তের বিভৎস ঘ্রাণ
আমাকে না পেতে হয়।
আমাকে অন্ধ করে দাও-নতুবা দাও আরো উজ্জলতা
যেন দিগন্তে উড়ন্ত বলাকা দলের
একসাথে চলার চমৎকার মিথষ্ক্রিয়া
আমি দেখতে পাই আমার দু'নয়ন ভরে।



রাজর্ষি দে

নিশাচর

গভীর রাত্রি দুজন সখা-
নিয়ন আলো, বিষন্নতা।

সব রাত আদরের নয়...
সব রাত নিদ্রার নয়...
সব রাত শান্তির নয়...
যখন অন্ধকার তার সবটুকু কালো নিয়ে
নেমে আসে কলকাতার রাজপথে;
যখন ক্লান্ত মানুষ দু হাত দিয়ে প্রহর হাতড়ায়
এক ফোঁটা বিস্মরণের খোঁজে।

থমকে থাকা ঘড়ির কাঁটা
সময় তখন অসুস্থতা!

সে সব রাতে সময় অনন্ত হয়
পাপেও অরুচি আসে...
রাজপথ জোড়া হোর্ডিং
শিকার খুঁজতে বেরোয়!
রক্তের লোনা স্বাদ মেখে থাকে
গৃহস্থের বালিশে চাদরে।

আদিম চাঁদ- রক্তমাখা
শহর জোড়া কবর পাতা!


বিবেকানন্দ দাস

জুঁইমালা
                                             
তোমাকে পাওয়ার অহংকার 
দুর্বিনীত করে তোলে আমায়,
 
আমি মাতাল সন্ধ্যায় চলার পথে
 
জুঁইয়ের মালা কিনি তোমার খোঁপায়
 
নক্ষত্ররাশীকে বেঁধে দেবো ব'লে!
 
আমি অহংকারে বলি - মেঘ-
 
তুমি প্রিয়ার আলুলায়িত চুলের মতো,
 
হরিণী ধার করে নেয় তোমার চোখ,
 
পদ্মপাঁপড়ি তোমার ঠোঁট,
 
গোলাপ লজ্জায় মাথা নিচু করে
 
তোমার গাল আর চিবুকের লালিমায়,
 
বাতাস আড়চোখে বুঝে নেয়
 
তোমার উদাসী জুলফির ভঙ্গিমাটি,
 
আকাশ উদার হয় হৃদয়ের স্পর্শে তোমার!


আমি সেরেঙ্গেটিকে বিদ্রুপে বলি 
তোমার নভোদেশের গল্প,
 
কাঞ্চনজঙ্ঘাকে বলি মাথা নোয়াতে
 
তোমার বুকের কাছে,
 
নায়াগ্রাকে দেখাই তোমার হৃদয় উৎসারিত
 
স্নেহ, প্রেম ভালোবাসার অনাবিল প্রপাত,
 
আমি আমাজনের দুর্বৃত্ত জঙ্গলকে বলি
 
আমার প্রিয়ার জঙ্ঘা অনতিক্রমনীয়,
 
আমি বৃষ্টিকে বলি - কি ভাবে ঝরতে হয়
 
শিখে নিতে তোমার কাছে
 
বকুল শিখে নেয় - মন খারাপের দিনে
 
তবু কিভাবে আঘ্রাণ ছড়াতে হয় নীরব বাতাসে,
  
উষ্ণতা তোমার ওম ধার নেয়,
  
শীতের ঠোঁট ফাটে তোমার শীতলতাকে ছুঁয়ে!


আমি পৃথিবীর তাবড় সম্রাটকে বলি- 
বিদ্রোহে- আমার থেকে বড়ো ভিক্ষু তুমি নও,
 
আমার মতো ধনী!


আমার জুঁইয়ের মালা সারারাত জেগে থাকে 
নির্জন প্রদীপের পাশে
 
তোমার অহংকার বুকে নিয়ে!!



মাহমুদ নজির

কবিতা এবং কবিতা 
 
ইচ্ছে থাকলেই
কবিতা লেখা হয়না
কবিতা লিখতে হলে
ভাবতে হয়, জানতে হয় ভাষা
ছন্দ শব্দের বুনন!
পড়তে হয় ঢের...
না বলা যে কথাগুলি
কেউ বলেনি কোনোদিন
যে ব্যকুল উচ্চারণ
ধ্বনিত হয়নি কোনো কবির কবিতায়
ভাবে মগ্ন হয়ে সে কথায়
ছড়াতে হয় শব্দে -ছন্দে গেঁথে 
খুঁজতে হয় আলোকিত পথ
দেখাতে হয় স্বপ্ন আর মুক্তির দিশা
ধর্মান্ধ, উজবুক, পাথর হৃদয়
গলাতে হয় বরফের মতো 
তৃষ্ণার্ত ; দগ্ধ  বুকে সুকোমল
ফোটাতে হয় ফুল
সাময়িক লোভ, লিপ্সা
দুহাতে সরিয়ে দিয়ে দিনরাত
খেটেখুটে কবিকে লিখতে হয়
সেই অমর কবিতা
যা উচ্চারণ মাত্রই পৃথিবীর সব
মরনাস্ত্র যাবে থেমে